ব্যায়াম করার পদ্ধতি, ব্যায়ামের উপকারিতা – সঠিক ও সহজ উপায়

আমরা এই ব্লগের মধ্যে খুব সহজভাবে উপস্থাপন করেছি: ব্যায়াম করার পদ্ধতি, এবং ব্যায়াম করার উপকারিতা, আপনি সঠিক উপায়ে কিভাবে ব্যায়াম করতে পারেন সে বিষয়টা। আশাকরি আপনাদের অনেক উপকারে আসবে, যদি ভালো লাগে অবশ্যই বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন।

ব্যায়াম বা শরীরচর্চা কি?

ব্যায়াম বা শরীরচর্চা হলো শারীরিক যে কোন কার্যক্রম, সুস্থতা বা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে এমন কিছু কলাকৌশল- যার মাধ্যমে শরীরের বিভিন্ন স্থান নিয়মিত আন্দোলিত হয়। অন্যভাবে বলতে গেল বলা যায়, এটি এক ধরনের অঙ্গভঙ্গি।

মাংসপেশী ও সংবহনতন্ত্র সবল করতে, শারীরিক নৈপুন্য বৃদ্ধি করতে, ওজন হ্রাস করতে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে শরীরের নানা অংশে আন্দোলিত করার জন্য এটি করা হয়। তাই ব্যায়ামকে আমরা শরীরচর্চাও বলতে পারি।

ব্যায়ামের প্রয়োজনীয়তা

মানুষ তার শরীর নিয়ে নানা জটিল সব সমস্যা নিয়ে ভোগে। আর এটি হঠাৎ করেই সৃষ্টি হয় না। নানা রকম অনিয়মের জন্য এই ধরনের শারীরিক সমস্যার সৃষ্টি হযে থাকে। এই সমস্যার জন্য মানুষ নানা ধরনের চিকিৎসা গ্রহণ করে থাকে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সমস্যার সমাধান হয় না।

কিন্তু মানুষ যদি একটু সচেতন হয় তবে শারীরিক বিভিন্ন ধরনের সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে পারে। আর এই পরিত্রাণ এনে দিতে পারে একমাত্র শারীরিক ব্যায়াম। এই ব্যায়াম শারীরিক সমস্যা থেকে পরিত্রাণে সাহায্য করে। হৃদরোগ, সংবহনতন্ত্রের জটিলতা, ডায়াবেটিক, স্থূলতা কমাতে শারীরিক ব্যায়াম কার্যকর ভূমিকা রাখে।

তাছাড়া কোন ব্যক্তির যৌন আবেদন বৃদ্ধি, মানসিক অবসাদগ্রস্ততা দূর করতে, সামগ্রিক মানসিক স্বাস্থ্যের সুরক্ষায় ভারসাম্য রক্ষায় এটির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। বর্তমান স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান শারীরিক ব্যায়ামকে ‘অলৌকিক বা আশ্চর্যজনক’ টনিক হিসেবে ঘোষণা করেছে। শরীরের সামগ্রিক সুস্থতা বজায় রাখতে ব্যায়ামের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য।

আপনি যদি একজন স্টুডেন্ট হন তাহলে পড়ালেখা শুরু করার আগে, অবশ্যই আপনার কিছু প্রয়োজনীয় ব্যায়াম রয়েছে সেগুলো করলে আপনি পড়া খুব সহজে মনে রাখতে পারবেন। পড়া মনে রাখার উপায়.

ব্যায়াম করার পদ্ধতি
ব্যায়াম করার পদ্ধতি

ব্যায়ামের প্রকারভেদ

ব্যায়াম মানুষের শরীরের উপর প্রভাব বিস্তার করে। এই প্রভাবের উপর ভিত্তি করে আমরা শারীরিক ব্যায়ামকে ৩টি শ্রেণিতে ভাগ করতে পারি। যেমন:

  • সবাত
  • অবাত ও
  • স্ট্রেচিং ব্যায়াম।

সবাত ব্যায়াম: যে ব্যায়ামে অতিরিক্ত শ্বাস নেওয়ার দরকার হয় সেই ব্যায়ামগুলোকে সবাত ব্যায়াম বলে। এই ব্যায়াম শরীরের মাংসপেশীর সাহায্যে শরীরের অক্সিজেন গ্রহণের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়।

এর কাজ হলো- হৃৎপিণ্ড ও ফুসফুসসহ বিভিন্ন অঙ্গের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে। এই ধরনের ব্যায়ামের আওতায় পড়ে সাইক্লিং, হাইকিং, টেনিস, সাঁতার, ফুটবল হা ডু ডু ইত্যাদি খেলাধুলা।

অবাত ব্যায়াম: এটি সবাত ব্যায়ামের বিপরীত। এতে বাড়তি শ্বাস নেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। এই ব্যায়াম শরীরের শক্তি বৃদ্ধি, মাংসপেশী গঠন ও হাড়ের সবলতা বৃদ্ধি করে। এ জাতীয় ব্যায়ামের আওতায় পড়ে ভারউত্তোলন। অর্থাৎ কোন ভারি জিনিস উত্তোলন বা বহনক্ষমতা রপ্ত করা।

স্ট্রেচিং: পেশীর টান বা নমনীয়তার ব্যায়াম। এই ব্যায়াম সাধারণত মাংসপেশী সম্প্রসারণ ও বৃদ্ধিতে বিশেষ সহায়ক ভূমিকা রাখে। এর প্রধান কাজ হলো- শরীরের অঙ্গ-প্রতঙ্গগুলো সঞ্চালনের সক্ষমতা বাড়িয়ে তোলা। কোন আঘাত পাওয়ার প্রবণতাকে কমিয়ে দিতে সক্ষম।

মানবদেহে ব্যায়ামের প্রভাব

ব্যায়াম মানবদেহে নানা ধরনের প্রভাব ফেলে। যার কারণে শারীরিক বিভিন্ন পরিবর্তন সাধন হয়। ব্যায়াম সাধারণাত যে সকল বিষয়ে প্রভাব বিস্তার করে তা হলো-

বিপাক ও মাস্কুলোস্কেলিটাল সহনশীলতায় প্রভাব বিস্তার করে।

কঙ্কাল সংক্রান্ত পেশী অঙ্গসংস্থানবিদ্যা ও কর্মক্ষমতা বৃদ্দিতে। যেমন: পেশীর শক্তি ও ক্ষমতা বৃদ্ধি, পেশী তন্তুর মাপ বৃদ্ধি, স্নায়ুপেশীর অভিযোজন বৃদ্ধি, অ্যানোরিবিক ক্ষমতা বৃদ্ধি, ধৈর্যধারণক্ষমতা বৃদ্ধি, মাইটোকন্ড্রিয়াল জৈবজনন বৃদ্ধি ইত্যাদি।

শরীর ও বিপাকীয় অভিযোজন- হাড়ের খনিজ ঘনত্ব বৃদ্ধি, দৈনন্দিন জীবনযাত্রার ক্রিয়াকলাপ ক্ষমতা বৃদ্ধি।

শারীরিক গঠন- শরীরের চর্বি হ্রাস, চবিহীন শরীরের ভর বৃদ্ধি।

গ্লুকোজ বিপাক- ইনসুলিন মাত্রা কমেে ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বাড়ে

কার্ডিওভাসকুলার- বিশ্রামের হৃৎস্পন্দন কমে, স্ট্রোক ভলিউম বাড়ে, সিস্টোলিক রক্তচাপ কমে, ডায়স্টোলিক রক্তচাপ কমে। সর্বোপরি কার্ডিওভাসকুলার ঝুঁকি কমে।

ব্যায়ামের উপকারিতা

ব্যায়াম আমাদের শরীরে নানা ধরনের উপকার করে। এই ব্যায়াম কখনো বাড়াতে আবার কখনো কমতে সহায়তা করে। তবে এর জন্য নানা ধরনের ব্যায়াম থেকে আপনাকে বেছে নিতে হবে আপনার প্রয়োজনীয় ব্যায়ামটি।

ব্যায়াম সাধারণত পেশীর কর্মক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে, অস্থি শক্ত করতে, রক্তসংবহনতন্ত্রের ক্রিয়াকলাপ স্বাভাবিক রাখতে, দেহের ওজন স্বাভাবিক রাখতে কিংবা অতিরিক্ত ওজন কমাতে ব্যায়ামের বিকল্প নেই।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সমীক্ষায় দেখা গেছে নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রেমের অভাবে প্রায় ২০ ভাগ ক্ষেত্রে হৃদরোগ ও ডায়াবেটিক, প্রায় ১৫ ভাগ ক্ষেত্রে বৃদ্ধ বয়সে হঠাৎ করে পড়ে যাওয়া এবং প্রায় ১০ ভাগ ক্ষেত্রে মেয়েদের স্তন ক্যান্সারের জন্য দায়ি। সুতরাং নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম করাও ব্যায়ামের অন্তভুক্ত।

ব্যায়ামের বিধি-নিষেধ

সবার জন্য সব ব্যায়াম নয়। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যায়াম করা উচিৎ।তা না হলে ঘটে যেতে পারে বড় ধরনের কোন দুর্ঘটনা। তাই ব্যায়ামের কিছু বিধি-নিষেধ নিচে উল্লেখ করা হলো।

সর্বপ্রথম ডাক্তারের কাছে জেনে নিতে হবে কোন ব্যায়ামটি করবেন।

কোনটি আপনার জন্য উপযোগী।

শারীরিক ক্ষমতা ও বয়স অনুযায়ী ব্যায়াম করুন।

ভরা পেটে ব্যায়াম করবেন না।

গর্ভকালীন ব্যায়াম করা উচিৎ নয়।

ঠাণ্ডা লাগলে, ঋতুস্রাবের সময়, ক্লান্ত থাকলে, পেশী ব্যথায়, ভারি খাবারের পর ব্যায়াম করা যাবে না।

ব্যায়াম করার উপযুক্ত সময় – যোগ ব্যায়াম করার নিয়ম

কিছু কিছু গবেষক মত প্রকাশ করেন, রাতে ঘুমের আগে ব্যায়াম করলে ঘুম ভালো হয়।আবার কিছু কিছু গবেষক বলেন, ঘুমের আগে ব্যায়াম করা ঘুমকে ব্যাহত করে। তাহলে আমাদের কী করা উচিত?

‘আসলে আমাদের ঘুমের আগে ব্যায়াম করা ভালো, না  খারাপ- এটি ভাবার আগে ভাবুন, ব্যায়াম করাটাই সবচেয়ে বেশি জরুরি। কোন সময়ে ব্যায়াম করছেন তা মুখ্য বিষয় নয়। শরীর ভালো রাখতে ব্যায়াম কিছুতেই বাদ দেওয়া উচিত নয়। 

উপসংহার

প্রতিদিন ব্যায়াম করা সুস্বাস্থ্যের জন্য জরুরি। ব্যায়াম শরীরকে ফিট এবং কর্মক্ষম রাখে। সম্প্রতি একটি গবেষণায় বলা হয়, সকালের চেয়ে বিকেলে ব্যায়াম করা বা হাঁটা ভালো। তবে তার মানে এই নয় যে, সকালের ব্যায়াম ভালো নয়। তবে বিকেলে ব্যায়াম স্বাস্থ্যের জন্য বেশি উপকারী।

error: Content is protected !!